RAISE (Recovery & Advancement of Informal Sector Employment)

“ছোট উদ্দ্যোগে মানব সক্ষমতার বিকাশ”

মো: হুমায়ূন কবির

পরিচালক (কার্যক্রম), ফোকাল পার্সন, RAISE প্রকল্প, শতফুল বাংলাদেশ।

প্রকল্প পরিচিতি

শতফুল বাংলাদেশ ২০২২ সাল থেকে উদ্যোগ, উদ্যোক্তা ও দক্ষ মানবসম্পদ উন্নয়ন এবং নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে RAISE (Reviving and Advancing Income-generating Small Enterprises) নামক একটি ৫ বছর মেয়াদি (২০২২-২০২৬) প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। এই প্রকল্পটি ৩টি জেলায় ২৫টি শাখার মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে, যা কর্মঅঞ্চলের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।

প্রকল্পের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য

RAISE প্রকল্পের মূল লক্ষ্য হলো ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা ও নিম্ন-আয়ের পরিবারের তরুণদের সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত করা। নির্দিষ্ট উদ্দেশ্যগুলো হলো:

  • কোভিড-১৯-এ ক্ষতিগ্রস্ত ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের পুনরুদ্ধার: কোভিড-১৯ মহামারীতে ক্ষতিগ্রস্ত ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের ব্যবসায়িক কার্যক্রম পুনরায় সচল করতে অর্থায়ন ও প্রশিক্ষণ প্রদান।

  • পিছিয়ে পড়া উদ্যোক্তাদের সক্ষমতা বৃদ্ধি: তুলনামূলকভাবে পিছিয়ে পড়া ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের দক্ষতা উন্নয়নের মাধ্যমে তাদের উদ্যোগ সম্প্রসারণে সহায়তা।

  • তরুণদের জন্য কর্মসংস্থান: নিম্ন-আয়ের পরিবারের তরুণদের অ্যাপ্রেন্টিসশিপ পদ্ধতিতে প্রশিক্ষণ প্রদান এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি।

লক্ষ্যভূক্ত জনগোষ্ঠী

RAISE প্রকল্প নিম্নলিখিত জনগোষ্ঠীকে লক্ষ্য করে কার্যক্রম পরিচালনা করছে:

  • পিকেএসএফ-এর সহযোগিতায় পরিচালিত ঋণকার্যক্রমের আওতাভুক্ত নিম্ন-আয়ের পরিবারের তরুণ সদস্য (শহর ও পেরি-শহর এলাকা)।

  • তুলনামূলকভাবে পিছিয়ে পড়া ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা ও তাদের পরিবার।

  • সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠী, যেমন দলিত, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী, চর, হাওড়, পার্বত্য অঞ্চল, চা বাগান, উপকূলীয় এলাকা এবং প্রতিবন্ধী (PwD) তরুণ ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা।

প্রকল্পের কার্যক্রম

RAISE প্রকল্পের কার্যক্রমগুলোর মধ্যে রয়েছে:

  • কোভিড-১৯-এ ক্ষতিগ্রস্ত ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের জন্য প্রশিক্ষণ ও অগ্রসর-RAISE ঋণ প্রদান।

  • নিম্ন-আয়ের পরিবারের তরুণ ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের জন্য দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ ও অগ্রসর-RAISE ঋণ।

  • নিম্ন-আয়ের পরিবারের তরুণদের জন্য অ্যাপ্রেন্টিসশিপ কার্যক্রম।

২০২৩ সালের অর্জন

২০২৩ সালে শতফুল বাংলাদেশ RAISE প্রকল্পের আওতায় উল্লেখযোগ্য অর্জন সম্পন্ন করেছে:

  • শাখা নির্বাচন: শতফুল বাংলাদেশের ৪৬টি শাখার মধ্যে ২৫টি শাখা RAISE প্রকল্পের জন্য নির্বাচিত হয়েছে।

  • সমিতি নির্বাচন: ২৫টি শাখায় ৪৭৩টি সমিতি নির্বাচন করা হয়েছে।

  • ঋণ বিতরণ: ৫০০ জন সদস্যকে প্রত্যেককে ১ লক্ষ টাকা করে ঋণ প্রদান করা হয়েছে।

  • প্রশিক্ষণ: ফেব্রুয়ারি থেকে মে ২০২৩ পর্যন্ত ৫০০ জন সদস্যকে “ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা ও ব্যবসায় ধারাবাহিকতা বিষয়ক (SGB)” প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে।

  • আউটরিচ বৈঠক: মে থেকে জুন ২০২৩ এবং আগস্ট থেকে সেপ্টেম্বর ২০২৩ পর্যন্ত ১১টি শাখায় আউটরিচ/উঠান বৈঠক পরিচালনা করা হয়েছে, যেখানে ২১৫ এবং ৩৫৫ জনের বেশি নারী-পুরুষ অংশগ্রহণ করেছেন।

  • অ্যাপ্রেন্টিসশিপ প্রশিক্ষণ: প্রথম ধাপে ৬টি বিষয়ে (মোটরসাইকেল সার্ভিসিং, মোবাইল ফোন সার্ভিসিং, ফ্যাশন গার্মেন্টস, বিউটি পার্লার ও বিউটিফিকেশন, ওয়েল্ডিং, ইলেকট্রনিকস) ১৮ জন মাস্টারক্রাফট পার্সন এবং ৩৫ জন শিক্ষানবিশ নির্বাচিত হয়েছেন। এই শিক্ষানবিশদের জন্য জানুয়ারি থেকে আগস্ট ২০২৩ পর্যন্ত প্রশিক্ষণ সম্পন্ন হয়েছে।

  • জীবন দক্ষতা প্রশিক্ষণ: ৩৫ জন শিক্ষানবিশকে দুটি ব্যাচে (২০ জন: ২০-২৪ জুন ২০২৩; ১৫ জন: ৯-১৩ জুলাই ২০২৩) জীবন দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে।

  • দ্বিতীয় ধাপের কার্যক্রম: অক্টোবর ২০২৩ থেকে মার্চ ২০২৪ পর্যন্ত ১২টি শাখায় ১০টি বিষয়ে (মোটরসাইকেল সার্ভিসিং, মোবাইল ফোন সার্ভিসিং, ফ্যাশন গার্মেন্টস, বিউটি পার্লার ও বিউটিফিকেশন, ওয়েল্ডিং, গ্রাফিক্স ডিজাইন, অ্যালুমিনিয়াম ফেব্রিকেশন, টাইলস অ্যান্ড মার্বেল ফিটিং, ইলেকট্রনিকস) ৩১ জন মাস্টারক্রাফট পার্সন এবং ৮০ জন শিক্ষানবিশ নির্বাচিত হয়েছেন। এই কার্যক্রম ১ অক্টোবর ২০২৩ থেকে শুরু হয়েছে এবং ৩১ মার্চ ২০২৪-এ সমাপ্ত হবে।

  • ঋণ বিতরণের অগ্রগতি: ২ কোটি ১০ লক্ষ টাকা বিতরণের লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ১ কোটি ৯৯ লক্ষ ২০ হাজার টাকা ১৭০ জন সদস্যের মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে।

উপসংহার

শতফুল বাংলাদেশের RAISE প্রকল্প ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা ও নিম্ন-আয়ের তরুণদের সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। প্রকল্পটি সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীকে অগ্রাধিকার দিয়ে তাদের জীবনমান উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে, যা দেশের টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্য পূরণে সহায়ক।