স্মার্ট-ফিশারিজ (SMART-FISHERIES)

সাসটেইনেবল মাইক্রোএন্টারপ্রাইজ অ্যান্ড

রেসিলিয়েন্ট ট্রান্সফরমেশন (স্মার্ট) প্রকল্প

মো: হুমায়ূন কবির

পরিচালক (কার্যক্রম), ফোকাল পার্সন, সাসটেইনেবল মাইক্রোএন্টারপ্রাইজ অ্যান্ড রেসিলিয়েন্ট ট্রান্সফরমেশন (স্মার্ট) প্রকল্প, শতফুল বাংলাদেশ।

ভূমিকা

শতফুল বাংলাদেশ রাজশাহী জেলার মোহনপুর ও বাগমারা উপজেলায় পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ)-এর আর্থিক ও কারিগরি সহায়তায় সমন্বিত কৃষি উন্নয়নে কাজ করে আসছে। পাঁচটি শাখার মাধ্যমে সংগঠনটি কৃষি, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ খাতে গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন ও স্বনির্ভরতা অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। পিকেএসএফ-এর সাসটেইনেবল মাইক্রোএন্টারপ্রাইজ অ্যান্ড রেসিলিয়েন্ট ট্রান্সফরমেশন (স্মার্ট) প্রকল্পের একটি অংশীদার সংস্থা হিসেবে শতফুল বাংলাদেশ পরিবেশবান্ধব ও জলবায়ু-সহনশীল মাইক্রোএন্টারপ্রাইজ উন্নয়নে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে। এই আর্টিকেলে শতফুল বাংলাদেশের স্মার্ট প্রকল্পে অবদান ও এর প্রভাব তুলে ধরা হয়েছে।

স্মার্ট প্রকল্প: একটি সংক্ষিপ্ত পরিচিতি

পিকেএসএফ-এর স্মার্ট প্রকল্পটি বিশ্বব্যাংকের ২৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং পিকেএসএফ-এর ৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের তহবিলে ২০২৩ সালে শুরু হয় এবং ২০২৮ সাল পর্যন্ত বাস্তবায়িত হবে। এই প্রকল্পের মূল লক্ষ্য হলো মাইক্রোএন্টারপ্রাইজগুলোর জন্য সম্পদ-দক্ষ ও জলবায়ু-সহনশীল উৎপাদন পদ্ধতি (Resource Efficient and Cleaner Production – RECP) প্রচার করা। এটি কৃষি, উৎপাদন ও সেবা খাতে জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় কর্মরত মাইক্রোএন্টারপ্রাইজগুলোর টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করছে। শতফুল বাংলাদেশ এই প্রকল্পের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হিসেবে রাজশাহীর বরেন্দ্র অঞ্চলে এই লক্ষ্য বাস্তবায়নে কাজ করছে।

শতফুল বাংলাদেশের অবদান

শতফুল বাংলাদেশ স্মার্ট প্রকল্পের আওতায় দুটি প্রধান খাত—মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ—এর মাধ্যমে জলবায়ু-সহনশীল ও পরিবেশবান্ধব কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে। নিম্নে এই খাতগুলোতে শতফুলের অবদান বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হলো:

১. মৎস্য খাতে অবদান

মৎস্য খাতে শতফুল বাংলাদেশ পুকুরে মাছের মিশ্রচাষ, পাড়ে সবজি চাষ, বাহারি মাছের মিনি হ্যাচারি, কুচিয়া মাছ চাষ, পেন কালচার এবং খাঁচায় মাছ চাষের মতো কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে। স্মার্ট প্রকল্পের মাধ্যমে এই কার্যক্রমগুলো জলবায়ু-সহনশীল পদ্ধতির উপর জোর দিয়ে পরিচালিত হচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ, পন্ড ডাইক গ্রিনিং এবং খাঁচায় মাছ চাষের মতো পদ্ধতি পানির দক্ষ ব্যবহার এবং পরিবেশ সংরক্ষণে সহায়তা করছে। এছাড়া, স্থানীয় মৎস্যজীবীদের প্রশিক্ষণ ও প্রযুক্তি সরবরাহের মাধ্যমে তাদের উৎপাদনশীলতা ও আয় বৃদ্ধি পাচ্ছে।

২. প্রাণিসম্পদ খাতে অবদান

প্রাণিসম্পদ খাতে শতফুল বাংলাদেশ মাচায় ছাগল পালন, গাভি পালন, কেঁচো সার উৎপাদন, লেয়ার, ব্রয়লার/সোনালী ও দেশি মুরগি পালন, পেকিন হাঁস পালন, হাইড্রোপনিক ফডার উৎপাদন এবং দুগ্ধজাত পণ্য উৎপাদনের উপর গুরুত্ব দিচ্ছে। স্মার্ট প্রকল্পের আওতায় এই কার্যক্রমগুলো পরিবেশবান্ধব ও সম্পদ-দক্ষ পদ্ধতির মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ, কেঁচো সার ও হাইড্রোপনিক ফডার উৎপাদন কৃত্রিম রাসায়নিকের ব্যবহার হ্রাস করে পরিবেশ সংরক্ষণে অবদান রাখছে। এছাড়া, প্রশিক্ষণ ও উপকরণ সরবরাহের মাধ্যমে নারী উদ্যোক্তাদের ক্ষমতায়ন করা হচ্ছে।

স্মার্ট প্রকল্পে শতফুলের প্রভাব

শতফুল বাংলাদেশের স্মার্ট প্রকল্পের কার্যক্রম রাজশাহীর বরেন্দ্র অঞ্চলে জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় মাইক্রোএন্টারপ্রাইজগুলোর টেকসই উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলছে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে:

  • কর্মসংস্থান সৃষ্টি: শতফুলের প্রশিক্ষণ ও উপকরণ সরবরাহের মাধ্যমে হাজার হাজার মৎস্যজীবী ও প্রাণিসম্পদ উদ্যোক্তার জন্য নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।

  • নারীর ক্ষমতায়ন: প্রাণিসম্পদ পালনের মতো কার্যক্রমে নারীদের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি পেয়েছে, যা তাদের অর্থনৈতিক স্বাধীনতা বাড়িয়েছে।

  • পরিবেশ সংরক্ষণ: কেঁচো সার ও পানি-সাশ্রয়ী মাছ চাষের পদ্ধতির প্রচলনের মাধ্যমে পরিবেশ দূষণ হ্রাস পেয়েছে।

  • জলবায়ু-সহনশীলতা: জলবায়ু-সহনশীল মাছ চাষ ও প্রাণিসম্পদ পালনের পদ্ধতি গ্রহণের মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় স্থানীয় সম্প্রদায়ের সক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছে।

উপসংহার

শতফুল বাংলাদেশ পিকেএসএফ-এর স্মার্ট প্রকল্পের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হিসেবে বরেন্দ্র অঞ্চলের গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর জন্য টেকসই ও জলবায়ু-সহনশীল মাইক্রোএন্টারপ্রাইজ গড়ে তুলছে। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ খাতে পরিবেশবান্ধব ও সম্পদ-দক্ষ পদ্ধতির প্রচলনের মাধ্যমে শতফুল বাংলাদেশ শুধু অর্থনৈতিক উন্নয়নই নয়, বরং পরিবেশ সংরক্ষণ ও জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায়ও অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে। এই উদ্যোগ বাংলাদেশের গ্রামীণ অর্থনীতির রূপান্তরে একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করছে, যা ২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্নকে বাস্তবায়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।